বিভাগ আলাদা হলেও মা ও মেয়ে দুজনেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করছেন। মা আবেদা সুলতানা রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক আর মেয়ে সাবিহা চৌধুরী হচ্ছেন ক্লিনিক্যাল ফার্মেসি অ্যান্ড ফার্মাকোলজি বিভাগের প্রভাষক।
মা আবেদা সুলতানা বললেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাবা-ছেলে, বাবা-মেয়ে শিক্ষক রয়েছেন। তবে মা-মেয়ে শিক্ষকের সংখ্যা অত্যন্ত কম হওয়ায় তাঁদের ঘিরে সহকর্মীদের আগ্রহ উৎসাহ বেশি। এই আগ্রহ তাঁদের মধ্যে ভালো লাগা সৃষ্টি করে। সোমবার (২৪ জুন) প্রথম আলো পত্রিকায় এ তথ্য প্রকাশিত হয়। লিখেছেন নাজনীন আখতার। আবেদা সুলতানা ১৯৯৬ খ্রিষ্টাব্দে কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন। ২০০১ খ্রিষ্টাব্দে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেন।
তিনি জানান, ১৯৮৫ খ্রিষ্টাব্দে হলিক্রস কলেজ থেকে এইচএসসি পাসের পর চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী মোহাম্মদ আলী চৌধুরীর সঙ্গে বিয়ে হয়ে চট্টগ্রাম চলে যান। ১৯৮৯ খ্রিষ্টাব্দে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতিবিজ্ঞান বিভাগ থেকে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হয়ে অনার্স পাস করেন। এ বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনিই প্রথম ব্যক্তি, যিনি প্রথম শ্রেণি পেয়েছিলেন।
আবেদা সুলতানা বলেন, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ পাওয়ার সময় তিনি রাজধানীর একটি কলেজে শিক্ষকতা করতেন। কুষ্টিয়া যাওয়া নিয়ে সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছিলেন। মেয়ে সাবিহা তখন ভিকারুননিসা নূন স্কুলে প্রথম শ্রেণিতে পড়ে। স্বামী ব্যবসার প্রয়োজনে ওই সময় সৌদি আরবের জেদ্দায় ছিলেন। নিজ পরিবার আর শ্বশুরবাড়ি বিশেষ করে ছোট্ট সাবিহার উৎসাহে তিনি নিজের মায়ের কাছে মেয়েকে রেখে চলে যান কুষ্টিয়া।
আবেদা বলেন, আমার অত ছোট্ট মেয়েটা আমাকে অভয় দিয়ে বলল, আম্মু তুমি যাও, আমি থাকতে পারব। এখন এই সময়ে এসে মনে হয়, ওই দিন বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ না দিলে ভুল করতাম। সাবিহা চৌধুরী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দে। এর আগের এক বছর তিনি ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেছেন।
সাবিহা জানান, ২০০৮ খ্রিষ্টাব্দে এইচএসসি পাসের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগে ভর্তি হন। রাষ্ট্রপতির কাছ থেকে গোল্ড মেডেল ও ডিনস অ্যাওয়ার্ড পাওয়া সাবিহা এ বছরের আগস্টে যুক্তরাষ্ট্রের ইন্ডিয়ানা অঙ্গরাজ্যের পারডু বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি করতে যাচ্ছেন।
সাবিহা বলেন, ছোটবেলা থেকে আম্মুকে শিক্ষকতা করতে দেখেছি। আম্মুকে সব সময় পরিপাটি হয়ে ক্লাসে যেতে দেখতে ভালো লাগত। তবে মূল অনুপ্রেরণা পেয়েছি নিজের স্কুল-কলেজের শিক্ষকদের দেখে। তবে মেয়ে শিক্ষকতায় যোগ দিক—এটা শুরুতে চাননি মা আবেদা। তিনি বললেন, আমি চেয়েছিলাম ও প্রকৌশলী হোক। কিন্তু ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে চাইল। আমি ওর ইচ্ছেতে আর বাধা দিইনি।
সাবিহা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় ক্লাসের সময়ে মিলত না বলে আম্মুর সঙ্গে কখনো যাওয়া হতো না। এখন আমরা একই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, প্রায়ই একসঙ্গে আসা-যাওয়া করি। মা-মেয়ে দুজনই জানালেন, তাঁদের পছন্দ–অপছন্দে মিলই বেশি। নিয়মিত না হলেও তাঁরা রাঁধতে ভালোবাসেন। দুজনই ঘরে-বাইরে ভিন্ন ধরনের খাবার খেতে পছন্দ করেন। ঘুরতে ভালোবাসেন। আর দুজনেরই পছন্দের পোশাক শাড়ি।